বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কবরস্থান নিয়ে বিরোধ; হামলার ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত মিরপুর দি হোপ স্কুলে শিক্ষার মানোন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে চারদফা প্রস্তাব করবেন প্রধানমন্ত্রী

তরফ নিউজ ডেস্ক: প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি এই বিষয়ে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে চারদফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রস্তাবগুলো আমি জাতিসংঘের চলতি ৭৪ তম অধিবেশনে উত্থাপন করবো সেগুলো উল্লেখ করছি। যেগুলো হচ্ছে-

১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছে সুস্পষ্ট করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।

২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও এবং দেখ’ এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।

৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্য নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা দূর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা প্রদান করেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অতীতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনেও তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসরনে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সেই প্রস্তাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সমূহের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সহ রাখাইন রাজ্যে একটি বেসামরিক নিরাপদ পর্যবেক্ষন এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও ছিল।

প্রধানমন্ত্রী পুনর্বক্ত করেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীর প্রথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পেতে হবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড.মাহাথির মোহাম্মদ,ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমেন এবং সৗদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.ইব্রাহিম বিন আব্দুলআজিজ আল-আসাফ ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। যারমধ্য রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,কানাডা, জার্মানী,বেলজিয়াম,ইউরোপীয় ইউনিয়ন,সুইডেন, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক,সিঙ্গাপুর,কুয়েত,সার্বিয়া, ফিলিপাইন এবং গাম্বিয়া থেকে আগত অতিথিবৃন্দ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক সহায়তা এবং অন্যান্য সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো সমাধান করে। তবে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এর স্থায়ী সমাধান বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে হবে, যেখানে তারা শতাব্দির পর শতাব্দি বসবাস করেছিল,’বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত দু:খজনক যে, রোহিঙ্গা সমস্যার কোনরকম সমাধান ছাড়াই আমরা আরো একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোহিঙ্গারা নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান কার্যক্রম অনুসরণ করছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, ওআইসি তাঁর জবাবদিহিতা সম্পর্কিত অ্যাড-হক মন্ত্রিপরিষদ কমিটির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এ বছরের ৩১ মে মক্কা আল মুকাররমায় অনুষ্ঠিত ১৪ তম ওআইসি সম্মেলনের যৌথ ঘোষণা’র প্রশংসা করে।
‘এতে বলা হয় গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন অ্যাডহক মন্ত্রিপরিষদ কমিটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ওআইসি’র পক্ষে মামলা করার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। আমরা বিশ্বাস করি ওআইসি’র যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের এটাই সময়,’বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক নির্বাসিত ১১ লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলাম, যা ইসলামের নৈতিক শিক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে এবং তাঁদের দেশে ফেরত না যাওয়া অবদি সম্ভব সকল ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ ।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ৬ হাজার ৮ ’শ একরের বেশি বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে, যাতে বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবা, পানি, স্যানিটেশনসহ রোহিঙ্গাদের সবধরনের মানবিক সহায়তা দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন,‘ রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সাধনে বিপুল সংখ্যক বেসরকারী খাতের জনবলকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক-বিদ্যুৎ সরবরাহসহ নতুন ও অতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২১৯টি মেডিক্যাল সুবিধা স্থাপন করা রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ সহায়তার জন্য সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত সরকারি তালিকাভুক্ত ৩৯ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা এতিম শিশুর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। এছাড়া তিনি তাঁর বিশেষ ত্রাণ তহবিল থেকে রোহিঙ্গা ত্রাণ শিবির স্থাপন করা কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণের জন্য আড়াই মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য প্রদান করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিক ঘনবসতির সমস্যা সমাধান এবং মানবিক সেবার সুবিধার্থে সুরক্ষার সমস্ত বিধান রেখে রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভাসানচরের উন্নয়ন করেছি।’

তিনি বলেন,‘ মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে উন্নত আবাসন এবং জীবিকার সুযোগও থাকবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com